Monday, July 7, 2008

বৈশাখীর পুজোর সাজ :

বৈশাখীর পুজোর সাজ:

আমরা শুনতাম আমাদের ঠাকুমা দিদিমা’দের কাছে তাদের পুজোর গল্প , নিয়মে বাধা ৫ দিন কীভাবে কাটাতো বাড়ীর বউ আর পাড়া প্রতিবেশীরা মিলে। আবার দিদিমারা শুনেছেন তাদের দিদিমা’দের কাছে রাজবাড়ীর পুজোর আয়োজন কিংবা জমিদার গিন্নীর সাজের ঘটা। যা শুধু অন্দরমহলের নারীগণ-ই দেখতে পেতো, বাইরের লোকজন দেখতো শুধু দু’হাত টানা ঘোমটার ফাঁকে সোনার চমক আর আলতায় রাঙা দুটি’পা।

আমাদের এই যুগে আমরা কত 'ফ্যাশনেবল' হয়ে গেছি। পুজোর আনন্দের রেশ আলাদা, পরিবর্তন এসেছে নিজেদের মধ্যেও, এখন শুধু আমার-তোমার পুজো –নিজেরা ঘুরি, নিজেরাই সাজি, প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে ঘুরে বেড়াই। সবার পুজোর ব্যাপারটা রইল কোথায় আর? প্রত্যেক বছরের মতো এবারেও রওনা দেবো “লিভারপুল”এর পুজোর টানে। আমি পুজোর সময় কোথাও ঘুরতে যেতে পছন্দ করি না। ৫-৬ দিন প্যান্ডেলে বসে থাকাটাই প্রিয়। ঘুরতে যাওয়ার জন্য তো রয়েছে আরো ৩৬০ দিন। তাই এই ৫দিন শুধু আমার আর বাপের বাড়ীতে ঘুরতে আসা মা দুর্গার।

পুজো আসার দু এক মাস আগে থেকেই মিশ্র আবেগ, আনন্দ, আল্হাদে মন ভরে ওঠে। মনের মধ্যে যেন সারাক্ষণ রাগ দরবারি বেজে চলেছে। আর শুরু হয় নিজেকে লক্ষ্মীরূপে সাজিয়ে তোলার সরঞ্জামের তালিকা তৈরী। আমি এবার কলকাতা গিয়ে বেশ কিছু শাড়ী কিনে এনেছি। তাদের মধ্যে কিছু শাড়ী বাছাই করে রেখে দিয়েছি পুজোর কয়েক’টা দিনের জন্য। আমি পুজোর সময় নিজেকে শাড়ী দিয়ে সাজাতেই পছন্দ করি, সালোয়ার পড়তে একদম’ই ভালো লাগেনা।

ষষ্ঠীর সকাল (বাড়ীতেই থাকব) :
সকালে উঠে নতুন কাপড় মায়ের পায়ে ছুঁয়ে পরাবো নিজেকে পীচ্ রঙের গা-ভর্তি চিকোনের কাজ করা শাড়ী, আজকে মায়ের গয়না দেখে এতটাই অভিভূত যে নিজেকে আর সাজাতে ইচ্ছে করছে না। নিজেকে নিজের মতো করে সমর্পন করব।

সপ্তমীর দিন যাত্রা হবে শুরু :
মায়ের মুখ দেখব কালচে লাল রঙের সিল্ক কাঁথা শাড়ীতে। সঙ্গী হবে সোনার কানের দুল, আর একটা ছোট্ট লকেট আর সোনার হার, হাতভর্তি চুড়ী ও এলো চুল।

অষ্টমীর সকাল :
আজ অঞ্জলি দেওয়ার পালা। সাজাবো নিজেকে ক্রীম রঙের একটা কোটা সিল্ক দিয়ে-ওপরে সোনালী সুতোর কাজ। সঙ্গে থাকবে কিছু মুক্তোর গয়না।

অষ্টমীর রাত : আজ মহারাত্রি। তাই সাজগোজের পর্বও হবে আজ ভালোমতন। আজকে নিজেকে আবার বধূ রূপে দেখতে ইচ্ছে করল।তাই পরব বিয়ের বেনারসীটা।সঙ্গে থাকবে কিছু সোনার গয়না, চলাফেরা করার সময় লোক এর দৃষ্টি আকর্ষন করবে টুংটাং চুড়ীর আওয়াজ।

নবমীর সকাল :
আজ পরব একটা ঢাকাই শাড়ী। খুব হাল্কা পীচ্ রঙের একটা ঢাকাই জামদানী। তার সাথে গয়না নামমাত্র।তবে চিরসঙ্গী কাজল থাকবে দু’চোখ ভরে।

নবমীর রাত : আজ দেবী দু্র্গার সামনে নিজেকে মেলে ধরব রাস্ট বালুচড়ীতে।সঙ্গে কটা চোকার আর কানের দুল। সিঁথি ভর্তি সিঁদুর আজ জ্বলজ্বল করবে বাকি প্রত্যেক দিনের মতো।আর সঙ্গে বাজবে এতদিনে সবার পরিচিত চুড়ীর আওয়াজ।

দশমীর সকাল :
আজ মনখারাপ করার পালা।আর সাথে চির পরিচিত বাঙালীয়ানা সাজ—লাল,সাদা পাটলি পল্লু মাটকা সিল্ক।আজকে আমাকে সাজানোর ভার তো তোমাদের সবার। সিঁদুর দিয়ে সাজিয়ে তুলবে তোমরা আমাকে।কপালে বড় লাল টিপ ঐতিহ্যের শোভা এনে দেবে আর দু’চোখ ভরে থাকবে কাজল ।





বৈশাখী বসু
লিভারপুল, ইউ.কে

5 comments:

Anonymous said...

Bah! ki darun laglo porey!

শারদীয়া পুস্পাঞ্জলি said...

Bornonatei bujhte parchhi kamon shundor kore shajbe Baishakhi.

Pujor shubhechha roilo.

Shraddha.

Unknown said...

Lekhata khub bhalo laglo r Pujor saje photo ta teo khub sundor lagche tomake Baisakhi.

Lekhanee said...

Agam ekta abhas pelam ... sarir nirbachangulo besh jathartho hoyechhe

jhum said...

baishakhi darunnnn pujor saj tor. pujor jonne agam onek subheccha. pujor saje kintu chobi lagate vulisna.