পুজো এসে গেল, আর পুজো আসা মানেই আমাদের বাঙ্গালী দের ঘরে ঘরে সাজো সাজো রব পরে যায়। আর সেই সাথে শুরু হয়ে যায় পুজোর এই পাঁচটা দিনে নিজেকে অপরূপ রূপে সাজিয়ে তোলার ধূম। প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে গিয়ে মা দুর্গার বিভিন্ন রূপ দর্শন করার সাথে সাথে চলতে থাকে সবার মধ্যে সাজ প্রদর্শনের একটা অলিখিত প্রতিযোগিতা।
আমি বাড়ীতে দুর্গা পুজো করি তাই প্রতিদিন ভোরে মায়ের পায়ে অঞ্জলি দেবো লাল পেড়ে গরদের শাড়ী পরে।
যদিও পুজোয় সাজের চমক দেয়াটাই রীতি, তাও আজ "বাংলার বধূ" ব্লগের পাঠক দের কাছে তুলে ধরছি যে এবারের পুজোতে আমি কিভাবে নিজেকে সাজিয়ে তোলার মায়াজাল বুনছি।
মহাষষ্টির বোধনের আলোতে.........আজ পুজোর প্রথম দিন। জগৎজননী মা দুর্গা সপরিবারে আসছেন ধরাধামে । এই শুভদিনে মা কে ঘরে তুলব গাঢ়

কমলা আর নীলচে বেগুনী পারের মনিপুরী সিল্ক পরে। এই শাড়ী টা কলেজ স্ট্রীট এর "আদি মোহিনী মোহন কাঞ্জিলাল" থেকে কিনেছি। ভীষণ সুন্দর এই শাড়ী টা তে আছে সেই ট্রাডিশনাল সোনালী জরির কাজ। সেদিন গলায়, হাতে, ও কানে পরব সাদা মুক্তোর গয়না। মুখে সামান্য ফাউন্ডেশন লাগিয়ে চোখে কাজল পরব, কপালে একটা বেগুনী রঙের টিপ আর হালকা একটু লিপস্টিক দেব। বেড়োনোর আগে সুগন্ধি লাগালেই পুজোর সাজ পরিপূর্ণ।
মহাসপ্তমীর স্বর্ণবেলাতে ...............আজ পরব গাঢ় পেঁয়াজী রঙের বাঁধনী জর্জেট শাড়ী। এই শাড়ীটা পার্ক স্ট্রীট এর "সবেরা" থেকে কেনা। শাড়ী টার সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি করেছে হাতে তৈরী বাঁধনী

কাজের মাঝে মাঝে মিরর ওয়ার্ক। মার্জিত জমকালো অথচ হালকা এই শাড়ী টার সাথে পরব ম্যাচিং স্টোনের গয়ণা, আর হাত সাজাব পেঁয়াজী রঙের কাঁচ আর স্টোনের চুড়ি তে । হালকা মেক আপ, তবে আজকে চোখের ওপরের পাতায় আই লাইনার দিয়ে নয়ন দুটো কে সাজিয়ে তুলব, আর কপালে স্টোনের টিপ সাজ টাকে আরও ফুটিয়ে তুলবে। সামান্য ব্লাশ অন আর ডার্ক ম্যাজেন্টা রঙের লিপস্টিক পরে আমি সপ্তমীর পুজোতে যাব।
মহাষ্টমীর মহাসাজ...................সন্ধ্যেবেলায় ঘিয়ে আর ময়ুরকন্ঠি রঙের জরি পারের একটা সিল্ক গাদোয়াল পরব। অষ্টমীর জন্য এই শাড়ী টা এবারে ট্র্যান্গুলার পার্ক এর "আদি ঢাকেশ্বরী

বস্ত্রালয়া" থেকে কিনেছি। অলঙ্কার হিসেবে থাকবে কুন্দন আর নীল জার্কনের হাসুলী হার, কানের দুল, হাতে চুড় আর টিকলি। হালকা খোপা করে একটা সাদা ফুলের মালা জরিয়ে দেব আর খোপার ঠিক মাঝখানে দেব একটা ময়ুরের ঝুরা। কপালে থাকবে একটা বড় ময়ুরকন্ঠি টিপ। কুমকুম দেব সিঁথি তে আর একটু নামিয়ে সিঁদুর পরে সিঁথির প্রান্তে একটা ছোট্ট সোনার টিপ পরব। হালকা মেক আপ, চোখে কাজল আর ডার্ক মেরুন লিপস্টিক। আজকে নাকে একটা নোলক পরার ইচ্ছে আছে।
মহানবমীর মোহময়ী সন্ধ্যায়………আজ রাত্রে পরব একটা কালো আর অলিভ গ্রিন রঙের ওয়ালকালাম সিল্ক। দক্ষিণের আঙ্গিকে তৈরী এই শাড়ীটি এবারে

আমি গড়িয়াহাটের "ট্রেডার্স অ্যাসেম্বলী" থেকে কিনেছি। পাটলীপাল্লু ধাঁচে এই শাড়ী টি খুব জমকালো কিন্তু রুচিশীল। পুজোর শেষ দিনে এই শাড়ী টার সাথে পরব অ্যান্টিক গোল্ড এর একটা জড়োয়া সেট। চুলটা খোলাই রাখব আর কপালে পরব নিজের হাতে আঁকা শাড়ীর সাথে ম্যাচিং করে একটা টিপ। সেদিন কিন্তু মেক আপ টা সামান্য লাউড হবে। নয়ন যুগলকে আজ একটু বেশী ভালবেসে আই লাইনার, মাসকারা, কাজল, আই শ্যাডো দিয়ে সাজাব আর শাড়ী টার সোনালী জরির সাথে ম্যাচ করে মেক আপ এ একটু ব্রোঞ্জ এফেক্ট আনার চেষ্টা করব। ডার্ক লিপস্টিক আর তাতে মানানসই ব্রোঞ্জ গ্লস দেব।
দশমীর বরণ বেলায়.............আজ মা দূর্গা কে বিদায় জানানোর দিন।

যদিও মা'র চলে যাওয়ার দুঃখ আছে তবে আছে পরের বার মা'য়ের ফিরে আসার প্রতিশ্রুতির বাণী। সেদিন মা'কে বরণ করব একটা চেরী লাল চান্দেরী সিল্ক পরে। এই শাড়ী টা পার্ক স্ট্রীট এর "রাজঘরানা" থেকে কেনা। এই শাড়ীর সাথে পরবো নেকলেস, চন্দ্রা হার, মান্তাশা, রতন চূড়, টিকলি আর কানবালা। আটপৌড় ভাবে শাড়ী টা পরে মাথায় ঘোমটা দিয়ে, বড় করে সিঁদুরের টিপ পরে, সীমন্ত রাঙীয়ে, পায়ে আলতা পরে আর মুখে পানের খিলি এঁটে মা'কে বরণ করবো।

অনুপা লাহিড়ী এলার্ড
ইউ.কে